বাণিজ্যিক ব্যাংক তার আমানতের একটি অংশ তারল্য হিসেবে রেখে বাকি টাকা বিনিয়োগকারীদের/ ব্যবসায়ীদের ঋণ হিসেবে প্রদান করে। বিনিময়ে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ আদায় করে। ব্যাংকের এই ঋণদান কার্যক্রম সফল করার জন্য ঋণগ্রহীতার নিকট থেকে কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করে তা যাচাই-বাছাই করে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো প্রয়োজনের জন্য নিজেদের নিকট তা সংরক্ষণ করে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ব্যাংকভেদে ভিন্ন ভিন্ন হলেও কিছু ডকুমেন্টস প্রায় সব ব্যাংকই সংগ্রহ করে। নিচে সেগুলোর বর্ণনা দেওয়া হলো-
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (National identification card) :
প্রত্যেক ঋণগ্রহীতাকে আবেদনপত্রের সাথে তার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশের ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। এটিতে নাগরিকের বিস্তারিত তথ্য সন্নিবেশিত থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রথমেই নিশ্চিত হতে চায় ঋণগ্রহীতা এ দেশের নাগরিক কি না। অতঃপর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা নিশ্চিত হয়ে ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করে।
২. ঋণগ্রহীতার/আবেদনকারীর ছবি (Photo of the applicant) :
ঋণের জন্য আবেদনকারীর পাসপোর্ট আকারের ছবি প্রদানও বাধ্যতামূলক। অনেক সময় জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার জন্য অনেক আবেদনকারী নিজ আবেদনের সাথে অন্যের ছবি সংযুক্ত করে দেয়। তাই আবেদনকারীকে নিজ পাসপোর্ট আকারের ছবি প্রদান করতে হয়।
৩. ট্রেড লাইসেন্স/বেতন পত্র (Trade license / Salary certificate) :
একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় শুরুর জন্য যেমন ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক, তেমনি ঋণ আবেদনকারীর ঋণ পাওয়ার জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স প্রদান বাধ্যতামূলক। আর ঋণ আবেদনকারী যদি ব্যক্তি হয়ে থাকে তবে তার Salary certificate / Salary statement প্রদান করতে হয়। অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কিনা, সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এটি নেওয়া হয়। অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক এর পাশাপাশি ৬ মাস বা ১ বছরের Bank Statementও গ্রহণ করে থাকে, যেখানে বেতনের টাকা জমা হয়।
৪. টিআইএন (TIN) সার্টিফিকেট (Tax Identification Number certificate):
ঋণের আবেদনকারীদের TIN সার্টিফিকেট প্রদান করতে হয়। প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর যে কর প্রদান করে সেটির সনদ প্রদান করতে হয়। তবে নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় শুরু করতে ঋণ নেওয়ার জন্য TIN সার্টিফিকেট প্রদান করতে হয় না।
৫. মালিকানাসংক্রান্ত দলিল/কাগজপত্র (Ownership papers ) :
একমালিকানা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যেমন ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়, তদ্রুপ অংশীদারি ব্যবসায়, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি ও প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্যও তাদের স্ব স্ব গোত্রীয় রেজিস্ট্রেশন সনদ নেওয়া হয়। যেমন: রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হতে রেজিস্ট্রেশনের সনদ। অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক ব্যবসায়ের অংশীদারদের মালিকানার অংশ সম্বলিত চুক্তিপত্রের কপিও সংগ্রহ করে থাকে।
৬. গ্যারান্টর/জিম্মাদারের প্রত্যয়নপত্র (Guarantor certificate) : ঋঋণের আবেদনকারী ঋণ প্রদানে ব্যর্থ হলে ঋণের দায়িত্ব নিবে এমন একজন গ্যারান্টরের তথ্যসম্বলিত প্রত্যয়নপত্র বা সম্মতিপত্র নেওয়া হয়। প্রত্যয়নপত্রে গ্যারান্টর কর্তৃক স্বাক্ষরিত নিশ্চয়তার বিষয়টি উল্লেখ থাকে।
ওপরে বর্ণিত ডকুমেন্টগুলো প্রায় সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করলে জমা দিতে হয়। এছাড়া অনেক বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের নিজস্ব নীতিমালার আওতায় আরো কিছু ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে থাকে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ ফেরতের যেমন নিশ্চয়তা চায়, তেমনি গ্রাহকের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সহযোগিতার হাতটি সর্বদা এগিয়ে দেয়।
আরও দেখুন...